Tuesday, May 17, 2016

A TRUE STORY.

..... একজন রিক্সাওয়ালা আমার পা জড়িয়ে ধরেছে।

আকস্মিক পা ধরায় আমি ভড়কে গেছি। আমি পা টানাটানি করছি, উনি ছাড়বেন না।
কষে ঝাড়ি দিলাম।
পা ছাড়েন, বলে টানাটানি করলাম, উনি উল্টো চেপে ধরেন।
help,people,brotherhood,friends
duronto hasib

অনুরোধ করা, হাতপা চেপে ধরা রিক্সাওয়ালারা সাধারণত বানিয়ে গল্প বলে। মেয়ের বিয়ে দিতে হবে অথবা আজ কোন আয় হয়নি, এক সের চাল কেনার টাকা খুব দরকার। বাসায় তিনজন না খেয়ে বসে আছে টাইপ সাজানো গল্প। এসব গল্পে বৈচিত্র্য নেই।
এই রিক্সাওয়ালাকে কড়া গলায় ধমক দিলাম।
-পা ছাড়েন। আমার সাথে কোন ভংচং চলবে না।
উনি আরো জোরে চেপে ধরলেন। কান্নাকান্না গলায় বললেন,

-বাপগো, একটু খানি দয়া দেও!
আমি নিশ্চিত এই কান্না সত্য নয়। চোখের দিকে তাকালে দেখা যাবে চোখ শুঁকনো।
আমি চোখের দিকে তাকিয়ে মোটামুটি বড় রকমের ধাক্কা খেলাম। চোখ ভেজা। চোখের পানি শুধু গালেই সীমাবদ্ধ নয়, শার্টের কলারও ভিজে গেছে।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
-কি হয়েছে আপনার?
উনি কাঁদতে কাঁদতে জবাব দিলেন। উত্তরটুকু মোটামুটি সাজিয়ে আমার ভাষায় বলছি।
...উনি গতকাল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
প্রচণ্ড পেটব্যাথা নিয়ে। ক্রনিক এপেন্ডিসাইটিস। অনেকদিন চেপে ছিলেন। ব্যাথা উঠলে চোখেমুখে অন্ধকার দেখেন। রিক্সা চালাতে গিয়ে বেশ কয়েকবার রাস্তাতেই এটাক হয়েছিল।
ডাক্তার বলেছে অপারেশন করতে হবে।
অপারেশনের আগে তাকে ঔষুধের দীর্ঘ লিস্ট ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি গরীব মানুষ। রিক্সা চালান। তার পক্ষ্যে এতদামী ঔষুধ কেনা সম্ভব নয়।
সকালবেলা ওয়ার্ড থেকে পালিয়ে গ্যারেজে এসেছেন। একটা রিক্সা নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। প্রয়োজনীয় ঔষুধের টাকা ম্যানেজ করবেন।
রিক্সাচালক আর বাংলা সিনেমার নায়ক জসীম এক ব্যাপার নয়। জসীম একদিনে রিক্সা চালিয়ে, লটারী পেয়ে, কুস্তি লড়ে দুই লাখ টাকা উপার্জন করতে পারে। রিক্সাচালক আবুল হোসেন পাঁচ হাজার টাকা সংগ্রহ করতে পারেন না।
... আমি অনেক কষ্টে পা ছাড়ানোর ব্যবস্থা করলাম।
তাকে বললাম,
-আপনার মোবাইল নাম্বার দেন। আমি যোগাযোগ করব, যদি কিছু করতে পারি।
উনি কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
-বাবা গো, আমার কোন মুবাইল নাই।
-আপনার কোন পরিচিত মানুষের নাম্বার জানেন?
-না বাবা।
-তাহলে কি হবে?
-কিচু একটা করি দেও না বাপ। আমি গরীব মানুষ।
আমি সমাধানের চেষ্টা করলাম। তাকে বললাম, পরদিন বিকেলে আমার হোস্টেলের সামনে আসতে। আমি ব্যবস্থা করব।
আমি সেই রাতে বিশেষ কাজে গ্রামের বাড়ি চলে গেলাম। একদিনের জায়গায় আটদিন থাকলাম। রিক্সাওয়ালার কথা ভুলে গেলাম।
আটদিন পর দুলকি চালে হোস্টেলে ফিরলাম। আমি মোটামুটি নিশ্চিত... এই রিক্সাওয়ালা এতদিনে সাহায্যের কথা ভুলে গেছে।
হোস্টেলে ফিরে আশ্চর্য হয়ে দেখলাম, বিকেলে সেই রিক্সাওয়ালা আমার হোস্টেলের সামনে বসে আছে।
জিজ্ঞাসা করলাম,
-এখানে কি করছেন?
-আপনেই তো আসতে কইছেন বাবা।
-আমি তো আজ আসতে বলি নাই।
রিক্সাওয়ালা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
-বাবা গো, আমি আটদিন থেকেই আসতাছি। পেটের ব্যাথা বাড়ছে।
-আপনার পেটের ব্যাথা বাড়লে আমি কি করব?
রিক্সাওয়ালা দুই হাত জোর করে মাথা নীচু করে অনেক কষ্টে বললেন,
-বাবাগো! কিচু একটা করি দেও গো বাবা!
আমি পড়লাম মহাসমস্যায়।
এত টাকা আমার একার পক্ষ্যে দেওয়া সম্ভব নয়। কেউ পরিচিতও নাই সে এক রিক্সাওয়ালাকে পাঁচ হাজার টাকা একবসায় দিয়ে ফেলবে।
আমি বেশ কয়েকজনকে নক করলাম।
কোন সদুত্তর পেলাম না। রাত দশটায় বাধ্য হয়ে আমার কলেজের প্রিন্সিপাল ও মেডিসিন ডিপার্টমেন্ট হেড প্রফেসর ডা. জাকির হোসেন স্যারের সাথে দেখা করতে গেলাম।
স্যারকে ঘটনা খুলে বললাম। স্যার কিছুক্ষন গম্ভীর হয়ে থাকলেন। শেষে বললেন,
-রিক্সাওয়ালাকে আমার সামনে আনো।
রিক্সাওয়ালাকে আনা হল। স্যার কথা বললেন। হাসপাতালে ভর্তি করালেন। প্রি-অপারেটিভ ঔষুধের ব্যবস্থা করলেন। চাইলেই কোন কোম্পানীকে নক দিতে পারতেন। কোম্পানীর রিপ্রেজেন্টেটিভরা উড়ে এসে পাঁচ হাজার টাকা ঔষুধ দিয়ে যেত। তিনি তা করলেন না।
আমার হাতে টাকা তুলে দিলেন।
আমি এবং রিক্সাওয়ালা আয়েশ করে ঔষুধ কিনলাম। বিকেলে হাসপাতালে ভর্তি করালাম। রাতের মধ্যে অপারেশন হয়ে গেল।
অপারেশনের পরদিন আবার আসব বলে বিদায় নিলাম। সেও বিদায় শেষ বিদায় হল। বেকার মানুষের কাজের চাপ বেশি। আমিও কাজের চাপে রোগীর খোজ নিতে ভুলে গেলাম।
পনেরদিন পর রিক্সাওয়ালা আমার হোস্টেলে আসল। ধন্যবাদ দিতে। আমি গম্ভীর গলায় বললাম,
-কি অবস্থা? আমি তো খোজ নিতে পারি নাই। মাফ দেন।
রিক্সাওয়ালা হাসল। হাসিমুখে বলল,
-অপারেশনের পরে একজন এসে আমাকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে গেছে গো বাবা। একটা ছেলে প্রায় এসে খবর নিত। একদিন আপেল আর আঙুর নিয়া আসছিল। আঙুর খাইতে পারি নাই। অল্প টক আছিল। আপেল অনেক স্বোয়াদ।
ব্যাপারটা সোজা।
স্যার নিজেই তার অধীনস্থ কাউকে পাঠিয়েছিলেন।
অপারেশনের পর রিক্সাওয়ালাটি অনেকদিন কাজ করতে পারবেনা। এই মুহুর্তে তার সংসার ভেঙে পড়বে। এই চিন্তাটা আমার মাথায় না আসলেও স্যারের মাথায় এসেছিল। দীর্ঘমেয়াদি চিন্তাগুলো আসে বলেই স্যার আমাদের সবার থেকে আলাদা। রংপুরের সব ডাক্তারের চাইতে আলাদা। বাংলাদেশের হাতে গোনা কয়েকজনের লিস্ট করলে স্যার নির্ঘাত টপলিস্টে চলে আসবেন।
এই পোস্টটি স্যারকে ট্রিবিউট করার জন্য নয়।
এই পোস্টটি দেবার কারণ হল- স্যারকে নিয়ে আজ প্রথম আলো রিপোর্ট করেছে। শিরোনাম ছিল-
বিনি পয়সার সেবা...
এখানে স্যারের প্রতিষ্ঠিত হাইপারটেনশন সেন্টারটিকে হাইলাইট করা হয়েছে। কমেন্টে লিংক থাকবে, পড়লেই বুঝতে পারবেন ব্যাপারটি।
সহজ কথায়... এটি একটি হাইপারটেনশন রিসার্চ সেন্টার ও চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র। স্যার নিজে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। স্যারের মা মারা গিয়েছিলেন উচ্চরক্তচাপজণিত স্ট্রোকে।
এরপর তিনি মা এবং বাবার স্মরণে গড়েছেন প্রতিষ্ঠানটি। বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এবং তিনমাস বিনামূল্যে ঔষুধ সেবা দিতে। মানবতার স্কেলে বিষয়টি একটি বড় রকমের ব্যাপার। কোন প্রতিষ্ঠিত কিংবদন্তী লেভেলের মেডিসিন স্পেশালিস্ট চেম্বার ছেড়ে সারাদিন ফ্রি কাজে সময় দিবেন না। স্যার দিচ্ছেন। একহাতেই মেডিকেল সামলাচ্ছেন... মেডিসিন ডিপার্টমেন্ট সামলাচ্ছেন... পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের হিসাবে সর্বাধিক সংখ্যক হাইপারটেনশনের রেজিস্টার্ড রোগীর সংগঠনে বিনামূল্যেই শ্রম দিচ্ছেন।
উদ্দেশ্য একটাই... মানুষ জানুক... উচ্চ রক্তচাপ কি ভয়াবহ ব্যাপার... মানুষ অন্তত জেনে, চিকিৎসা সেবা নিয়ে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকুক!
আমার পোস্টের উদ্দেশ্য প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞাপন নয়... স্যারকে নিয়েই কথা বলা।
আমি বোঝাতে চেয়েছিলাম... কিছু মানুষ নিজেই প্রতিষ্ঠান... প্রতিষ্ঠানকে ছাপিয়ে যান।
রংপুর মেডিকেল সম্মানিত প্রিন্সিপাল এবং মেডিসিন ডিপার্টমেন্ট হেড প্রফেসর ডাক্তার জাকির হোসেন স্যার একজন প্রতিষ্ঠান ছাপিয়ে যাওয়া মানুষ।
বলাবাহুল্য... আমার মা একজন উচ্চ রক্তচাপের রোগী।
তিনিও এই সেন্টারে রেজিস্টার্ড।
বংশগত হিসাবে আমারো চান্স আছে এই রোগের ওয়ারিশ হবার! হয়তো আমিও একদিন এই সেন্টারে রোগী হয়ে ভর্তি হব। আল্লাহপাক যেন স্যারকে বাঁচিয়ে রাখেন...একজন মহান স্যারের ছাত্র হিসাবেও আমি গর্বিত... রোগী হিসাবেও সম্মানিত বোধ করব।
স্যারের জন্য দোয়া করবেন।
TO GET MORE STORY

No comments:

Post a Comment